ফিরিবার পথ নাহি, দুর হতে দেখো চাহি, পারিবেনা চিনিতে আমায়… হে বন্ধু বিদায়…।
বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমন কবিতার চরণকে হার মানিয়েছে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিদায় বেলায়। সহানুভুতির যেনো অন্ত নেই। হয়তো চাকুরির নিয়মানুযায়ী বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে এই দশজন। তবুও আগের মতই পদচারণায় মুখরিত থাকার আহ্বান কেবল সহকর্মীদেরই নয় বরং দপ্তরটির অভিভাবক জেলা ও দায়রা জজ বাহাদুরের। সকল বিপদ-আপদে পাশে থাকতে চান বিদায়ীদের।
পারিবারিক সমস্যায় স্মরণাপন্ন হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। সহকর্মী এই মানুষগুলো কেবল অনুপ্রেরণাই ছিলেন না, বরং শিক্ষকও বটে। দপ্তরটির সবথেকে নিচু পর্যায়ের কর্মচারীর থেকেও শেখার অনেক কিছু রয়েছে এবং শিক্ষা গ্রহন করেছে বলেও জানালেন কর্মরত সহকর্মীরা।
জেলা ও দায়রা জজ বাহাদুর মোঃ হাসানুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে চোখের কোনে অশ্রু নিয়ে বিদায় দিলেন দপ্তরটির একসময়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ গোলাম সরোয়ার, নাজির মোঃ আঃ সালাম বাদল, সেরেস্তাদার মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ সালাউদ্দিন গাজী, মোঃ নিজাম উদ্দিন, প্রধান তুলনাকারক আঃ খালেক মিয়া, জারিকারক মোঃ আঃ জলিল মিয়া, মোঃ হাবিবুর রহমান পনু, অফিস সহায়ক মোঃ খালেক হাওলাদার ও মোঃ রুস্তুম আলীকে। দীর্ঘদিন কর্মজীবনের শেষ সময় আনুষ্ঠানিক বিদায় পেয়ে প্রত্যেক বিদায়ী অনন্দসিক্ত অশ্রু চোখে কৃতজ্ঞতার সাথে শুভেচ্ছা জানান জেলা ও দায়রা জজ বাহাদুর মোঃ হাসানুল ইসলামকে।
এসময় জেলা ও দায়রা জজ মোঃ হাসানুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে করোনা মহামারির ভয়াবহ অবস্থাকে টেনে পাঁচ সদস্যের কমিটির মাধ্যমে বরগুনা বিচার বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর টিকা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। সেই সাথে কর্মচারী কল্যাণ অ্যাসোসিয়েসনকে আরও বেগবান করার আহ্বান জানান। তিনি বিদায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মঙ্গল কামনা করেন। দাপ্তরিক কাজ থেকে বিদায় নিলেও অন্তর থেকে বিদায় নয়। এই দপ্তরের প্রতিটি দরজা উন্মুক্ত থাকবে। থাকবে সুখে-দুঃখের অংশিদার হয়ে। এমন কথাই তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে। বিদায়জনিত সংবর্ধণায় বিদায়ীদের কর্মদক্ষতার পরিচয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম. জাহিদ হাসান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নাহিদ হোসেন, সহকারী জজ আরিফুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মোঃ মেহেদী হাসান, সহকারী জজ সঞ্জয় পাল, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাসেল মজুমদার।
এছাড়াও কর্মময় জীবনে সহকর্মীদের থেকে পাওয়া শিক্ষা ও সহমর্মিতার বর্ণনা দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, নাজির মোঃ ফারুক আহম্মেদ, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন, নাজির মোঃ ইব্রাহীম খলিল। বিদায়ী অন্ষ্ঠুানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাদার মোঃ দুলাল আহমেদ।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান তুলনাকারী মাও. মোঃ মিহানুর রহমান কোরআন থেকে তেলওয়াত ও রেকর্ড কীপার অসিম কুমারের গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে এক ভিন্নধর্মী বিদায়ী অনুষ্ঠান শুরু হয়। পুরো অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর স্টেনোগ্রাফার মোঃ আমান উল্লাহ।